Header Ads Widget

বি বি নিউজ
বাংলা খবর সবার আগে

ইরানের আক্রমণে বাদ জনবহুল বেসামরিক এলাকা, হামলায় ইসরাইলে ত্রাহি ত্রাহি রব

unpopulated civilian areas spared from irans attack

BB NEWS DESK- 

শেষ পর্যন্ত ইসরাইলকে নিশানা করে ইসলামি প্রজাতন্ত্র ইরান ড্রোন ও মিসাইল আক্রমণ চালাল। শনিবার রাতে ইরানের বহু চর্চিত ও ঘোষিত এই হামলা শুরু হয়। ইসরাইলি সেনাবাহিনীর মুখপাত্র রিয়ার অ্যাডমিরাল ড্যানিয়েল হাগারি রবিবার সকালে জানান, সব মিলিয়ে ইরান ৩০০-র বেশি ড্রোন ও মিসাইল নিক্ষেপ করে। তাঁর হিসেব অনুযায়ী এর মধ্যে ১৭০টি ড্রোন, ৩০টি ক্রুজ মিসাইল এবং ১২০টি ব্যালিস্টিক মিসাইল।

তাঁর মতে, বেশিরভাগ ড্রোন ও মিসাইলকে ইসরাইল, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, ইউকে এবং জর্ডন আকাশেই নষ্ট করে দেয়। মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন বলেছেন, মার্কিন সামরিক বাহিনী যে মিলিটারি বিমান এবং ব্যালিস্টিক মিসাইল ডিফেন্স ডেস্ট্রয়ার গত সপ্তাহে পাঠিয়েছে, তা ইরানের অভূতপূর্ব আক্রমণ থেকে ইসরাইলকে রক্ষা করতে ব্যাপক সাহায্য করেছে। তবে ওয়াশিংটনের নীতি-নির্ধারকরা বলছেন, ইসরাইল তার হঠকারিতার দ্বারা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রকেও এই আঞ্চলিক সংঘাতে জড়িয়ে ফেলার চেষ্টা করছে বলে মনে করার কারণ রয়েছে।

ইসরাইল যদিও মুখে বলছে, ইরানের ড্রোন ও মিসাইল আক্রমণে তাদের বিশেষ কোনও ক্ষতি হয়নি, কিন্তু ইসরাইলি সেনা কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে যে, ইসরাইলের দক্ষিণ নেগেভ মরুভূমিতে ইসরাইলের যে বিমানঘাঁটি রয়েছে তা ইরানি মিসাইলের আঘাতে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ১ এপ্রিল, ২০২৪ সিরিয়ায় ইরানের দূতাবাসে যে বিমান হামলা হয়, সেই বিমানগুলি এই বিমানঘাঁটি থেকেই উড়ান ভরেছিল। ইরান অবশ্য জানিয়ে দিয়েছে, তাদের মিসাইলগুলি ইসরাইলের কোনও আবাসিক এলাকায় আক্রমণ শানায়নি। তারা লক্ষ্য রেখেছে, যেন কোনও বেসামরিক ব্যক্তির প্রাণহানি না হয়। তারা নেগেভ বিমানঘাঁটিতে হামলা চালিয়ে ওই ঘাঁটিকে প্রায় অকেজো করে দিয়েছে।

ইসরাইলে হামলা চালানোর আগে ইরান অবশ্য পশ্চিমা দেশগুলি এবং পার্শ্ববর্তী রাষ্ট্রসমূহকে আগাম সতর্ক করে দিয়েছিল যে, তারা ইসরাইলে হামলা চালাতে যাচ্ছে। এর ফলে অবশ্য ইসরাইল, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, ব্রিটেন এবং যায়নবাদীদের মিত্র জর্ডন প্রস্তুতির সময় পেয়ে গিয়েছিল। কিন্তু যুদ্ধ যাতে আরও না ছড়ায় তার জন্য ইরান এই পদক্ষেপ নেয়। হঠাৎ হামলা চালালে ইসরাইলের ক্ষয়ক্ষতি যা হয়েছে তা থেকেও অনেক অনেক বেশি হত।

ইরান বলেছে, তাদের এই হামলা সম্পূর্ণ বৈধ। সিরিয়ায় তাদের দূতাবাসে হামলা চালানোর বদলা হিসেবে তারা এই আক্রমণ চালিয়েছে। ইরনা-র এক খবরে বলা হয়েছে, রাষ্ট্রসংঘের চার্টাডের ৯১ ধারা যা আইন সম্মত প্রতিরক্ষার অধিকার দেয়, ইরান সেই অনুযায়ী ইসরাইলে এই হামলা চালিয়েছে।

ইরান সাফ বলে দিয়েছে যে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, ব্রিটেন, ইসরাইলের অন্য পশ্চিমা মিত্র এবং জাপান, দক্ষিণ কোরিয়া কেউই সিরিয়ায় ইরানের দূতাবাসে হামলার নিন্দা জানায়নি। 

ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ খামেনিই ওয়াদা করেছিলেন যে, ইসরাইলকে শাস্তি দেওয়া হবে। ইরানের প্রেসিডেন্ট ইব্রাহিম রাইসি বলেছেন, ইরানের বীর সৈনিকরা সর্বোচ্চ নেতার বক্তব্যকে বাস্তবে পরিণত করে দেখিয়েছে। 

কিন্তু ইসরাইলের নেতানিয়াহু মার্কিন হাতিয়ারের বদৌলতে গাজার রাফা অঞ্চলে আবারও হামলা চালিয়ে বহু নারী-পুরুষকে হত্যা করেছে। তাদের কোনও বিবেকবোধ আছে, এই ধারণা পৃথিবীর সভ্য সমাজ করে না। 

অনেকে বলে থাকেন, জার্মানিতে হিটলার পলায়মান নাৎসীদের একটি জাহাজ ডুবিয়ে বহু ইহুদিকে হত্যা করছে বলে যে ধারণা প্রচলিত আছে, তা প্রকৃতপক্ষে যায়নবাদীদেরই কাজ। তারা নিজেদের জন্য আলাদা ইসরাইল রাষ্ট্র গড়ার উদ্দেশে পশ্চিমা বিশ্বের সহানুভূতি আদায়ে এই কাজ করেছিল বলে অনেকের ধারণা। আর হলোকাস্টে ইহুদি নিধনের যে কাহিনী তারা প্রচার করে, তার সম্পূর্ণ সত্যতা নিয়েও অনেক পশ্চিমা বিশেষজ্ঞই প্রশ্ন তুলেছেন। কিন্তু এখন ইসরাইলিরা গাজায় হাজার হাজার মানুষে যে হত্যালীলা ও ধ্বংসযজ্ঞ চালিয়ে যাচ্ছে, তাকে জেনোসাইড বলতে আমেরিকা ও ব্রিটেনের ঘোরতর আপত্তি আছে।

রবিবারও যে সমস্ত বাস্তুচ্যুত ফিলিস্তিনি নারী তাদের ঘরবাড়ির দিকে রওনা দিয়েছিল ইসরাইল সেইসব নারী ও শিশুদের উপরও বোমা বর্ষণ করে। সারা বিশ্বে মানুষের কাছে তাদের আর কোনও গ্রহণযোগ্যতা কিংবা সহানুভূতি নেই। ব্যতিক্রম হচ্ছে, মুসলিম বিশ্বের সংযুক্ত আরব আমীরাত, জর্ডন এবং সউদি আরব। বোঝা যায় যদি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, ব্রিটেন, ফ্রান্স, জার্মানির মারণাস্ত্র এবং অর্থের মদদ না থাকত, তাহলে হামাসের হাতেই নেতানিয়াহুর অপারাজেয় সেনাবাহিনী আত্মসমর্পণ করতে পারত।

ইরানের এই হামলায় শেষ পর্যন্ত ইসরাইল স্বীকার করেছে, তাদের একটি সামরিক ঘাঁটি এবং গোয়েন্দা বিভাগের সদর দফতরও বিনষ্ট হয়েছে। ইরান যদি আগাম খবর না দিয়ে আক্রমণ করত, তাহলে ইসরাইলের অবশ্য ভয়াবহ হত।

ইরান জানিয়ে দিয়েছে, যদি ইসরাইল ইরানের কোনও প্রত্যাঘাত করে, তাহলে তারা আরও বহুগুণ শক্তি নিয়ে ইসরাইলে হামলা চালাবে। আর ইরান তাতে সক্ষমও। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে ডাইরেক্টর অফ ন্যাশনাল ইন্টেলিজেন্স জানিয়েছে, এই সমগ্র এলাকায় ইরানের হাতেই সবথেকে বেশি ব্যালিস্টিক মিসাইল রয়েছে।

তবে যুদ্ধের এবং মরার ভয়ে যে ইসরাইলিদের মধ্যে সব থেকে বেশি, তার প্রমাণ পাওয়া গেছে যে ইসরাইলের প্রশিক্ষিত বেসামরিক লোকেরা বেসমেন্টের সেল্টারে গিয়ে আশ্রয় নিয়েছে। একটি কোনও কাকপক্ষিকেও সমগ্র ইসরাইলের রাস্তায় দেখা যায়নি। মাইকিং করে তাদেরকে বাইরে আনতে হয়েছে।

আরও পড়ুন- সমগ্র মুসলিম বিশ্ব ফিলিস্তিনের স্বাধীনতা উদযাপন করবে: আয়াতুল্লাহ আল খামেনি |

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ