BB NEWS:
সপ্তাহ তিনেক পরে সাইরুল শেখ এর সঙ্গে তাঁর ভাগ্নে নাসিমুদ্দিনের গ্রামের বাড়িতে ফেরার কথা ছিল। কিন্তু সেটি হল না। চাপ চাপ ধুলো মাখা কালো ব্যাগ নিয়ে এসএসকেএমের ট্রমা কেয়ারের সিঁড়ির সামনে দাঁড়িয়ে রইলেন সাইরুল শেখ।
নাসিমুদ্দিন নামের ওই ছেলেটি রুটি-রুজির টানে দৈনিক ৭০০ টাকা মজুরিতে বহুতল তৈরির কাজে শহরে এসেছিলেন , রবিবার রাতে সেটির নীচেই চাপা পড়ে মৃত্যু হয়েছে ২৪ বছরের ওই যুবকের।
সোমবার সন্ধ্যায় কলকাতা পুরসভার অ্যাম্বুল্যান্সে ছেলের নিথর দেহ নিয়ে ট্রমা কেয়ারে পৌঁছে নাসিমুদ্দিনের বাবা আঞ্জিল শেখ বললেন, ‘‘সব শেষ হয়ে গেল।
বাড়িতে আর কাকে নিয়ে যাব?’’ প্রতিবেশী এক যুবকের মাধ্যমে দিন কুড়ি আগে মুর্শিদাবাদের কোলান রাধাকান্তপুরের বাসিন্দা নাসিমুদ্দিন গার্ডেনরিচের ওই বহুতলে রাজমিস্ত্রির কাজে এসেছিলেন।
সঙ্গে এসেছিলেন তাঁর এক শ্যালকও। সেই তরুণ, হুগলির বাসিন্দা ১৮ বছরের শেখ আবদুল্লাও ধ্বংসস্তূপের নীচে আটকে ছিলেন। এ দিন সন্ধ্যায় উদ্ধার হয় তাঁরও দেহ।
এমন ভাবেই এ দিন সকাল থেকে কখনও কলকাতা পুলিশ, কখনও পুরসভার অ্যাম্বুল্যান্সে করে একের পর এক মৃতদেহ এসেছে পিজির ট্রমা কেয়ারে। সঙ্গে আসা প্রতিটি পরিবার ছিল বাক্রুদ্ধ। সকলে বলছেন, ‘‘কোথা থেকে যে কী হয়ে গেল! ভাবতেই পারছি না।’’
রবিবার রাতে দুর্ঘটনার পরেই ঘটনাস্থলের কয়েকশো মিটার দূরে একটি বেসরকারি হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয় আহতদের। পরিস্থিতি সামাল দিতে কার্যত বিনিদ্র রাত কাটিয়েছেন সেখানকার কর্মীরা। তাঁদেরই এক জনের কথায়, ‘‘রাতে একের পর এক আহতদের রক্তমাখা অবস্থা দেখে ভয় পেয়ে গিয়েছিলাম। চোখ বন্ধ করলে এখনও ওই দৃশ্য ভাসছে।’’
রাতে এসএসকেএমে কাউকে আনা না হলেও, এ দিন সকালে ওই বেসরকারি হাসপাতাল থেকে শামা বেগম (৪৫), হাসিনা খাতুন (৫৫)-এর মৃতদেহ এসএসকেএমের পুলিশ মর্গে নিয়ে আসে কলকাতা পুলিশ। বেলা যত গড়িয়েছে, একে একে আকবর আলি (৩৪), রিজওয়ান আলম (২৩), মহম্মদ ওয়াসিক (১৯), মহম্মদ ইমরান (২৭), রমজান আলি (৬০)-র ক্ষতবিক্ষত দেহ ধ্বংসস্তূপ থেকে উদ্ধার করে আনা হয় ট্রমা কেয়ারে। প্রত্যেককেই পরীক্ষা করে চিকিৎসকেরা মৃত বলে জানান।
সন্ধ্যায় আসে নাসিমুদ্দিন ও আবদুল্লার দেহ। তাঁদের নিয়ে এ দিন রাত পর্যন্ত পিজি-তে আসা মৃতদেহের সংখ্যা হয় ৯। প্রত্যেকের এ দিনই ময়না তদন্ত করা হয়েছে বলে খবর।
বাড়ির ছেলে ভাঙা বহুতলের নীচে চাপা পড়েছে শুনে এ দিন সকালেই পিজির ট্রমা কেয়ারে চলে এসেছিলেন আবদুল্লার পরিজনেরা। কিন্তু সেখানে কোনও খবর না পেয়ে তাঁরা চলে যান ঘটনাস্থলে। সন্ধ্যায় আবদুল্লার দেহ নিয়ে পিজিতে এসে তাঁর এক আত্মীয় শেখ সেলিম জানান, আগে জব্বলপুরে সোনার কাজ করতেন আবদুল্লা।
0 মন্তব্যসমূহ